মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুরে জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম শহীদদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ৬ শতাধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন। এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং শত শত পরিবারের অশ্রু ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের প্রতীক। নার্গিস বেগম আরও বলেন, দেশের সামান্য অসতর্কতা আবারও ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিএনপি চায় স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হোক। তিনি স্পষ্ট করেছেন, বিএনপি কোনো সন্ত্রাসী দল নয় এবং রাতের আঁধারে ক্ষমতা দখল বা ভোট ডাকাতির নীতিতে বিশ্বাস করে না। প্রধান অতিথি স্মরণ করিয়ে দেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাকশালের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ ধারাবাহিকতায়, বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু করেন। নার্গিস বেগম বলেন, একক শক্তিতে ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব নয়, কারণ এর পেছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অশুভ চক্রান্ত রয়েছে। তিনি ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা গণআন্দোলনে কৌশলগত নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারেক রহমানের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের উদ্ভোদক হিসাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সম্মেলন কমিটির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, গত ১৬ বছর বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীন ও মানবতাহীন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম ছিল। এই সময় বেগম খালেদা জিয়া দেশ ছেড়ে যাননি। ওয়ান ইলেভেনের সময় তাঁকে বিদেশে যেতে বলা হলেও তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন আমার মৃত্যু হলেও আমি এই দেশেই থাকবো। তারেক রহমানকেও বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। অমান অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা নিজে বলেছিলেন “শেখের বেটি পালায় না” কিন্তু পরদিনই তিনি গোষ্ঠী-সমেত দেশ থেকে পালিয়ে যান। হাজারো ছাত্র-জনতার হত্যার ভয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে এবং ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসাবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, তারেক রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৪৪টি রাজনৈতিক দল জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করতে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের নেতৃত্বে যে গণআন্দোলন গড়ে ওঠে, সেখানে সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। তিনি নুরুল ইসলাম নূর ও আলী রাশেদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এখনো বাংলাদেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়নি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। মেহেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় বিশেষ বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা তাজ উদ্দিন খান, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম, মেহেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ফয়েজ মাহাম্মদ, সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান, মেহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি লতিব বিশ্বাস, সাধারন সম্পাদক অ্যাড. এহেন উদ্দীন মনা প্রমুখ। প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।