চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার দীননাথপুরে অবস্থিত জামেয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া কওমিয়া মাদ্রাসায় দুই ছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়ে জখমের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ইব্রাহিমকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আহত দুই শিক্ষার্থী মিরাজের বাবা মিলন আলী বাদি হয়ে শিশু আইনে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এরপরই আটক শিক্ষক ইব্রাহিমকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
আজ শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা (ওসি) খালেদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষককে আটকিয়ে রেখেছিল। খবর পেয়ে মধ্যরাতে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে আজ শুক্রবার দুপুরে শিশু আইনে আহত শিক্ষার্থী মিরাজের পিতা মিলন বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে শিক্ষক ইব্রাহিমকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।
ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের কুকিয়া চাঁদপুর গ্রামের গোরস্থান পাড়ার, মিলনের ছেলে মিরাজ (১২) ও একই এলাকার বজলুর রহমানের ছেলে রাব্বি (১৩)
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টার দিকে দীননাথপুরে অবস্থিত জামেয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া কওমিয়া মাদ্রাসায় এই মারধরের ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পর আহত শিক্ষার্থী মিরাজ জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা চারজন মিলে মাদ্রাসার মসজিদে ঘুমাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হুজুর ইব্রাহিমের ভাগ্নে হুজাইফা। ঘুমের ঘোরে ভুলবশত হুজাইফার গায়ে পা স্পর্শ হয়ে যায়। বিষয়টি নিজের চোখে দেখে ফেলেন শিক্ষক ইব্রাহিম। এরপর কোনো কথা না বলে ঘুমন্ত অবস্থাতেই লাঠি হাতে পেটাতে শুরু আমাকে ও রাব্বিকে। পরে আমাদের দুজনকে পাশের কক্ষে নিয়ে গিয়ে মেহগনি গাছের চেলা দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকে।
ঘটনার পর আহত শিক্ষার্থী রাব্বি জানায়, আমাকে কেন মারছেন। জিজ্ঞাসা করতেই আরও বেশি মারধর করে মেহগনি গাছের চেলা কাঠ দিয়ে। মারধরের পর শিক্ষক হুমকি দেন ঘটনাটি পরিবারকে জানালে তাদের জবাই করে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে অথবা মাদ্রাসার ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হবে।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মিরাজের মা জানান, “আমি বাড়িতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার ছেলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাড়ি ফিরেছে। শরীরে ধুলোবালি লেগে আছে। কী হয়েছে জানতে চাইলে ছেলেটি জানায়, ঘুমের মধ্যে হুজুরের ভাগ্নের গায়ে পা লেগে যাওয়ায় হুজুর নির্মমভাবে মারধর করেছে। জামা খুলে দেখি পুরো শরীরে আঘাতের দাগ। আমার সন্তান অন্যায় করলে আমাদের বলতে পারতেন, কিন্তু এভাবে মারধর করা মানবিক নয়। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
ঘটনার পর আহত রাব্বির বাবা বজলুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার ছেলে ও তার সহপাঠীকে যেভাবে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে, তা সহ্য করা যায় না। এর আগেও এই শিক্ষক এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছিলেন। ছেলে যদি কোনো অন্যায় করত, আমাদের জানানো যেত। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে শিক্ষক ইব্রাহিম ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেহেবুবা মুস্তারী মৌ জানিয়েছিলেন , “আহত দুই শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর দুজনকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।”