মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ
জনপ্রশাসন মন্ত্রীর পোশ্য পুত্র সামশুজ্জোহার সরকারি রাস্তা দখলের মতো স্পষ্ট অনিয়মের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের নীরবতা এবং প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি—দুটি বিষয়ই নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে মেহেরপুরের কদমতলা এলাকার জনগণের মনে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে রাস্তার একটি অংশ দখর নিতে চাচ্ছেন সামসু জোহা—যিনি অতীতে সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বিএনপি ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচয় দিতে শুরু করেছেন।
স্থানীয়দের দাবি, সামসু জোহা কয়েক বছর আগে এলাকা থেকে জমি কেনার পর থেকেই রাস্তা সংলগ্ন জায়গা নিজের দখলে নেয়। আবার নতুন করে দখলে নেয়ার চেষ্টা করছেন। বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রভাব খাটিয়ে পৌরসভার বাধাও উপেক্ষা করা হয়। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি তার নতুন নির্মিত বাড়ির সামনে লোহার পাইপ দিয়ে রাস্তার উপর নির্মাণ কাজ শুরুর চেষ্টা করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এলাকাবাসী বলছেন—বিগত ক্ষমতার পতনের পর সামসু জোহা হঠাৎই বিএনপির কিছু স্থানীয় নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে পুরনো ক্ষমতার পর নতুন ঢাল খুঁজছেন। এদিন ঘটনাস্থলেও তিনি দাবি করেন—“বিএনপি নেতা হাবিব ইকবাল অনুমতি দিয়েছেন।” বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি ও আমাদের সূর্যোদয় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহবুবুল হক পোলেন ঘটনাস্থলে ছবি-ভিডিও ধারণ করতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পোলেন জানান— “রাস্তা দখলের বিষয়ে জোহাকে প্রশ্ন করলে তিনি বিএনপি নেতা হাবিব ইকবালের অনুমতির কথা বলেন। বিষয়টি যাচাই করতে আমি ফোনে হাবিব ইকবালের সঙ্গে কথা বলি। তিনি জানান—এ জায়গায় ‘বড় নেতারাও জড়িত’, মাথা ঘামানো ঠিক না।” কিছুক্ষণ পর মেহেরপুর ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিব ইকবাল ঘটনাস্থলে এসে দখলদার সামসুজোহার পক্ষে দাঁড়ান। একই সঙ্গে তিনি ‘পৌরসভার বহু জায়গা রাস্তার উপর’ উল্লেখ করে গণস্বার্থের দাবিকে উল্টো প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেন। ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে হাবিব ইকবাল ক্ষিপ্ত হয়ে কাঠের চলা নিয়ে সাংবাদিকের ওপর তেড়ে আসেন এবং তার অফিসিয়াল মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ধারণ করা ভিডিও- ছবি ডিলিট করে দেন। সাংবাদিক পোলেন বলেন— “এটা শুধু একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা নয়, এটি তথ্য প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা। আমি মেহেরপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।” মেহেরপুর সদর থানার ডিউটি অফিসার অরুণ কুমার বলেন— “অভিযোগ পেয়েছি। অফিসার ইনচার্জ আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।” “যেখানে সরকারি রাস্তা দখল, সাংবাদিককে হুমকি, মোবাইল ছিনতাই ও প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ—এই সবের পরও পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে না কেন?” পুরো ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক বাস্তবতা, প্রশাসনিক নীরবতা এবং ক্ষমতাসীন-অতীত-নতুন সব পক্ষের ‘প্রভাবের ছায়া’ যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে
ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রীর পোষ্য পুত্র সামশুজ্জোহার রাস্তা দখল, প্রতিবাদী সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিলো স্থানীয় বিএনপি নেতা